লেবুর ২৫টি উপকারিতা ও অপকারিতাসহ রূপচর্চায় লেবুর ব্যবহার সম্পর্কে জানুন

আপনি কি লেবু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আজকের আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। লেবু পছন্দ করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুর্লভ। গরম থেকে এসে লেবু দিয়ে শরবত খেতে আমরা খুবই পছন্দ করি। তাছাড়া আমরা ভাতের সাথে ও আরো নানান রকমের ভর্তার সাথে লেবু খেতে বেশ পছন্দ করি। দৈনন্দিন জীবনে নানান কাজে লেবু ব্যবহার করা হয়। ত্বক , চুল ও রূপচর্চা থেকে শুরু করে খাওয়া পর্যন্ত প্রায় সকল কাজে লেবুর ব্যবহার অতুলনীয়। লেবু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা দুটোই রয়েছে।

লেবুর ছবি

তাহলে, চলুন লেবু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা, লেবু খাওয়ার সঠিক নিয়ম, লেবুর খোসার উপকারিতা ও অপকারিতা, ত্বকে লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা, চুলে লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা, খালি পেটে লেবু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা, অতিরিক্ত লেবু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা, ঠান্ডা পানিতে লেবু খাওয়ার উপকারিতা, রাতে গরম পানিতে লেবু খাওয়ার উপকারিতা, মধু ও লেবুর রসের উপকারিতা, মুখে লেবু ব্যবহারের নিয়ম, ত্বকে লেবুর ব্যবহার, চুলে লেবুর ব্যবহার, রূপচর্চায় লেবুর ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।

পোস্ট সূচিপত্র ঃ লেবু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং রূপচর্চায় লেবুর ব্যবহার

লেবু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

লেবু একটি উপকারি ফল এটা আমরা সবাই জানি। এ ছাড়া লেবুতে পাওয়া যায় ভিটামিন সি যা আমাদের দেহের ভিটামিনের চাহিদা পূরণ করে । তাই আমাদের দৈনন্দিন জীবনে খাবারের তালিকায় ভিটামিন সি যুক্ত খাবার রাখা জরুরি। তাই নিচে আমরা লেবু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি

উপকারিতাঃ

  • লেবুতে রয়েছে ভিটামিন C যা এন্টিসেপটিক হিসেবে কাজ করে এবং ঠান্ডা লাগা প্রতিরোধ করে।
  • লেবু শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করে।
  • লেবু বুক জ্বালা ও আলসার প্রতিরোধে সক্ষম।
  • লেবু শরীরের ভেতরের টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে এবং অন্ত্রনালী, যকৃতসহ পুরো শরীরকে পরিষ্কার রাখে।
  • লেবুর রসের সাথে গরম পানি মিশিয়ে খেলে পরিপাকতন্ত্র ও লিভার সুস্থ রাখে।
  • লেবু ক্যান্সার কোষ প্রতিরোধ করতে সক্ষম।
  • লেবুর রস মুখের কালো দাগ ও ব্রণ দূর করতে সাহায্য করে।
  • লেবুতে থাকা সাইট্রিক অ্যাসিড ইউরিনারি সাইট্রেটের মাত্রা বাড়তে সাহায্য করে যা কিডনির পাথর প্রতিরোধ করতে সক্ষম।
  • জ্বর, সর্দি, কাশি হলে লেবুর রসের সাথে মধু মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়।

আরো পড়ুন ঃ খেজুর খাওয়ার নিয়ম ও খোরমা খেজুর খাওয়ার উপকারিতা

অপকারিতাঃ

  • অতিরিক্ত লেবুর রস খাওয়ার ফলে গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • অতিরিক্ত লেবুর রস খেলে পেটে এসিডিটির সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
  • শরীরের ওজন কমানোর উদ্দেশ্যে অতিরিক্ত লেবুর রস খেলে কার্বোহাইড্রেট ও পুষ্টিগুণের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • অতিরিক্ত লেবু খাওয়ার ফলে লেবুতে থাকা সাইট্রিক অ্যাসিড দাঁতের এনামেল নষ্ট করে দিতে পারে।
  • লেবুর রস সরাসরি ত্বকে ব্যবহার করা যাবে না কারণ লেবুর রস সারসরি ত্বকে ব্যবহার করলে ত্বক জ্বালা পোড়া করতে পারে।

লেবু খাওয়ার সঠিক নিয়ম | লেবু খাওয়ার সঠিক পদ্ধতি

অনেকেই দিনের শুরুটা করে চা বা কফির মাধ্যমে। সকালের শুরুতে ঘুম থেকে উঠে চা বা কফি খেলে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয়। তাই, দিনের শুরুটা করুন এক গ্লাস পানি ও দুই চামচ লেবুর রসের সঙ্গে। আপনি চাইলে এই মিশ্রণে এক চামচ মধুও যুক্ত করতে পারেন এতে করে শরবতটি আরো সুস্বাদু হবে। সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে যদি ৪০০ মিলিলিটার পানি পান করেন তাহলে আপনার বিপাকক্রিয়ায় হার বেড়ে যাবে এবং আপনি সারাদিনে যা খান না কেন খাবার দ্রুত হজমেও সাহায্য করবে। 

লেবু পানির বদলে লেবুর খোসা চিবিয়ে খেলেও মিলবে এই সমাধান। সকালবেলা পানির সাথে লেবু ও মধু মিশিয়ে পান করলে ক্ষুধার পরিমাণও কমে যায়। এ ছাড়াও লেবু-মধু-পানির সাথে সামান্য লবণ মিশিয়ে পান করলে মিলবে কোষ্ঠকাঠিন্য জনিত সমস্যার সমাধানও। সকালের এক গ্লাস গমর লেবুপানি আপনাকে সারাদিনের ক্লান্তি থেকে মুক্ত রাখতে সক্ষম। 

লেবুর খোসার উপকারিতা ও অপকারিতা

অনেকেই লেবুর রসের চেয়ে লেবুর খোসা খেতে বেশি পছন্দ করে। আসলে সত্যি কথা বলতে লেবুর রস খেলে যটতা না উপকার পাওয়া যায় তার থেকে ১০ গুণ বেশি উপকার পাওয়া যায় লেবুর খোসা খাওয়ার মাধ্যমে। গবেষণায় পরীক্ষা করে দেখা গেছে লেবুর রসে যে পরিমাণ ভিটামিন রয়েছে তার থেকে বেশি রয়েছে লেবুতে থাকা খোসার মধ্যে। লেবুর খোসার মধ্যে রয়েছে বিটা ক্যারোটিন, ফলেট , ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাশিয়াম। এসব উপাদান শরীরের জন্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ।

লেবুর খোসার মধ্যে বিদ্যমান ভিটামিন সি ও সাইট্রিক অ্যাসিড। যা দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়া ও জিঞ্জিতাইটিস রোগসহ আরো অনেক রোগ প্রতিরোধ করতে সক্ষম। ভাতের সাথে বা অন্যান্য খাবারের সাথে নিয়মিত লেবুর খোসা মিশিয়ে খেলে মুক্তি পাওয়া যায় কিডনি স্টোনের মতো মরণব্যাধি রোগ থেকেও। অনেকেই বিভিন্ন রকম মানসিক সমস্যা ভোগেন। আর এই মানসিক সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে নিয়মিত লেবুর খোসা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। কারণ লেবুর খোসার মধ্যে থাকা সাইট্রাস বায়ো ফ্লেভানয়েড যা মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।

এ ছাড়াও ত্বকের সৌন্দর্য বাড়াতে লেবুর খোসার ভূমিকা অতুলনীয়। লেবুর খোসার মধ্যে থাকা অ্যান্ট-অক্সিডেন্ট ত্বকের ভেতর থেকে টক্সিক বের করে দেয়। যার ফলে ত্বকের বয়স কমতে থাকে এবং একইসাথে ত্বক থেকে দাগ, চাপ ও বলিরেখা দূর করে ত্বককে টানটান ও উজ্জ্বল করে তোলে। তাই, বয়স ৩০ পেরলেই বা ৩০ এর কৌটায় পৌঁছালে চিকিৎসকেরা লেবুর খোসা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। সুতরাং, আপনি যদি আপনার ত্বককে টানটান ও ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে চান তাহলে আজ থেকেই লেবুর খোসা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

আবার অনেকেই আছেন যারা প্রতিনিয়ত বদ-হজম , গ্যাস-অম্বল ইত্যাদি নানান সমস্যায় ভোগেন। বদ-হজম সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে প্রাকৃতিক এই উপাদানই যথেষ্ট। প্রাকৃতিক এই উপাদানটি মানব শরীরের জন্যে অনেক উপকারী। যাদের ক্যালসিয়ামের অভাব তারাও লেবুর খোসা খাওয়ার মাধ্যমে উপকার পেতে পারেন। কারণ লেবুর খোসার মধ্যে থাকা ভিটামিন সি ও ক্যালসিয়াম হাড়ের স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করে। তা ছাড়া লেবুর খোসা ইনফ্লেমেটরি পলিআর্থ্রাইটিস, অস্টিওপরোসিস এবং রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস রোগ থেকেও মুক্তি পেতে সাহায্য করে। 

এগুলো ছাড়াও লেবুর খোসা আরো অনেক রকমের সমস্যা থেকেও মুক্তি পেতে সাহায্য করে। যেমনঃ দেহের অতিরিক্ত ওজন কমাতে, হার্টের সমস্যা দূর করতে ও হার্টের ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে, লিভারের ক্ষমতা উন্নত করতে, শরীরের রক্ত প্রবাহ উন্নত করতে, ক্যান্সারের সমস্যা সমাধান করতে এবং মুখ গহ্বরের স্বাস্থ্য উন্নত সহ আরো অনেক রকমের উপকার করে থাকে।

আরো পড়ুন ঃ আমলকির উপকারিতা ও অপকারিতা এবং ঔষধি গুণাগুণ

লেবুর খোসার এতো উপকারিতা জানার পর স্বাভাবিক ভাবেই যে কারো মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে, লেবুর খোসার কোনো অপকারিতা রয়েছে কিনা? এখন পর্যন্ত কোনো গবেষণায় লেবুর খোসা খাওয়ার অপকারিতা পাওয়া যায় নি। বরং (ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) যুক্তরাষ্ট্রের এই কোম্পানিটা এটিকে নিরাপদ খাদ্য হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তাই নির্ভয়ে এবং নিশ্চিন্তে লেবুর খোসা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

খালি পেটে লেবু খাওয়ার উপকারিতা

অনেকেই খালি পেটে লেবু খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চান। তাই যাদের নিয়মিত খালি পেটে লেবু খাওয়ার অভ্যাস আছে তাদের জন্য আজকের আর্টিকেলের এই অনুচ্ছেদটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আজকের আর্টিকেলের এই অনুচ্ছেদের মাধ্যমে খালি পেটে লেবুর উপকারিতা সম্পর্কে জানতে পারবেন। তাহলে চলুন আর কথা না বাড়িয়ে খালি পেটে লেবুর উপকারিতা সমূহ জেনে নেই 

উপকারিতাঃ

  • খালি পেটে লেবুর রস খেলে শরীরের অতিরিক্ত মেদের পরিমাণ কমে যায় এবং হজমে সাহায্য করে।
  • লেবুর মধ্যে থাকা সাইট্রিক অ্যাসিড মূত্রের পরিমাণ বাড়ায় এবং কিডনির কার্যক্ষমতা সক্রিয় রাখতে সাহায্য করে।
  • খালি পেটে লেবু খেলে পেটের নানা রকমের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
  • লেবুর মধ্যে থাকা অ্যাসকর্বিক অ্যাসিড ও ভিটামিন C শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং জ্বর, সর্দি, কাশি , ঠান্ডা লাগা থেকে দূরে রাখে। 
  • লেবু দেহের ইমিউনিটি বাড়াতে সাহায্য করে।
  • লেবু ত্বকের সৌন্দর্য বাড়াতে এবং ত্বকের উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে।
  • লেবুতে থাকা পটাশিয়াম ও ভিটামিন B রক্তশূন্যতা দূর করতে সাহায্য করে।

গরম পানিতে লেবু খাওয়ার উপকারিতা

গরম পানির সাথে লেবু খেলে অনেক রকমের উপকার পাওয়া যায়। তাহলে চলুন গরম পানির সাথে লেবু খাওয়ার উপকারিতা কি তা জেনে নেই 

উপকারিতা ঃ

  • প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে গরম পানির সাথে লেবুর রস মিশিয়ে পান করলে দেহের pH এর মাত্রা ঠিক থাকে এবং দেহের কার্যক্ষমতা সক্রিয় থাকে।
  • লেবুর মধ্যে থাকা ভিটামিন C, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস ও ম্যাগনেসিয়াম শরীরের পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করে এবং লিভার থেকে ক্ষতিকর টক্সিন বেড় করতে সাহায্য করে।
  • প্রতিদিন সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে ও রাতে ঘুমানোর আগে গরম পানির সাথে লেবুর রস মিশিয়ে কুলকুলি করলে গলা পরিষ্কার থাকে ও কুসকুসে কাশি চলে যায়।
  • গরম পানির সাথে লেবু খেলে লেবুর মধ্যে থাকা ভিটামিন C, দেহের হরমোন গুলোকে সক্রিয় রাখে এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
  • প্রতিদিন সকালে কুসুম গরম পানির সাথে লেবুর রস মিশিয়ে খেলে সারাদিনের হজম শক্তি ভালো থাকে।
  • নিয়মিত গরম পানির সাথে লেবু মিশিয়ে খেলে দেহের হরমোনকে সক্রিয় রাখে এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
  • লেবুর মধ্যে থাকা ভিটামিন সি স্কার্ভি রোগ প্রতিরোধ করতে সক্ষম।

অতিরিক্ত লেবু খাওয়ার অপকারিতা

আমরা অনেকেই বাইরের অতিরিক্ত গরম থেকে এসে লেবুর শরবত খেতে পছন্দ করি। আবার অনেকে সকালের শুরুটা করে গরম পানির সাথে লেবুর রস মিশিয়ে খেয়ে। লেবুর নানান রকমের উপকারিতা সম্পর্কে জানলেও লেবুর অপকারিতা সম্পর্কে আমরা অনেকে জানি না। লেবুর যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনি এর অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও দেখা দিতে পারে। আমরা সকলেই জানি যে, লেবু একটি ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল। 

এটি আমাদের শরীরে ভিটামিন সি, পটাশিয়াম এবং ফাইবারের যোগান দিয়ে থাকে। অনেকে লেবুর উপকারিতার কথা জানলেও লেবুর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা জানে না। তাই, যারা অতিরিক্ত লেবু খেতে পছন্দ করেন তারা আজকের আর্টিকেলের এই অনুচ্ছেদটি পড়ার মধ্যে দিয়ে লেবুর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানতে পারবেন। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক অতিরিক্ত লেবু খেলে কি হয় সে বিষয়ে।

অতিরিক্ত লেবু খাওয়ার ফলে সর্বপ্রথম যে ক্ষতিটা হয় সেটি হচ্ছে দাঁতের। অতিরিক্ত লেবু খেলে লেবুর মধ্যে থাকা অম্লীয় উপাদান দাঁতের এনামেল ক্ষয় করে ফেলে। তাই, যাদের অতিরিক্ত লেবু খাওয়ার অভ্যাস আছে বিশেষজ্ঞরা তাদের দিনে দুবার করে দাঁত ব্রাশ করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। যাদের গ্যাসের সমস্যা আছে তারাও অতিরিক্ত লেবু খাওয়া থেকে বিরত থাকুন । কারণ অতিরিক্ত লেবু খাওয়ার ফলে পেটে গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যাও দেখা দিতে পারে।

আরো পড়ুন ঃ পেঁপে কেন খাবেন? পেঁপের উপকারিতা ও অপকারিতা

এ ছাড়াও অতিরিক্ত পরিমাণে লেবু খাওয়ার ফলে আরো অন্যান্য সমস্যাও দেখা দিতে পারে। লেবু এবং অন্যান্য সাইট্রাস ফল বেশি খেলে মাইগ্রেনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। অতিরিক্ত অ্যাসিডিক জাতীয় উপাদানের কারণে পেটে আলসার সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই আলসার রোগীদের অতিরিক্ত লেবু খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল রক্তে আয়রণ সংরক্ষণ করতে সাহায্য করে। কিন্তু যদি তা অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ করেন তাহলে রক্তে আয়রণের পরিমাণ বেড়ে যায় যা আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর।

লেবু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা - মধু ও লেবুর রসের উপকারিতা

মধু ও লেবু শরীরের জন্য একটি উপকারী উপাদান। অনেকে লেবুর রসের সাথে মধু মিশিয়ে খেতে বেশ পছন্দ করে। লেবুর রসের সাথে মধু মিশিয়ে খাওয়া যে কতটা উপকারী তা হয়তো আপনারা অনেকেই জানেন না। তাই, আপনি যদি লেবুর রসের সাথে মধু মিশিয়ে খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আজকের আর্টিকেলের এই অনুচ্ছেদটি সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে পড়ুন

লেবুর রসের সাথে মধু মিশিয়ে খাওয়ার উপকারিতাঃ

  • লেবু ও মধুতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। তা ছাড়া লেবু ও মধু অ্যান্টা-ব্যাক্টেরিয়াল উপাদানে ভরপুর হওয়ায় এটি আমাদের শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করে।
  • লেবু রসের সাথে মধু মিশিয়ে খেলে শ্বাস-প্রশ্বাস জনিত সমস্যা থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়। এ ছাড়াও এক গ্লাস কুসুম গরম পানির সাথে এক চামচ মধু ও দুই চামচ লেবুর রস মিশিয়ে খেলে ঘন কফ ও শ্লেষ্মা দূর হয়ে যায় এবং কুসকুসে কাশি থেকে আরাম পাওয়া যায়।
  • লেবুর রস এবং মধু একসাথে মিশিয়ে ত্বকের উপর প্রয়োগ করলে ত্বকের কালো দাগ দূর হয়ে যায়। লেবু ও মধুর মিশ্রণে তৈরি উপাদানটি মুখের কালো দাগ দূর করতে বেশ কার্যকরী। এই বিষয়ে আমরা নিচে আরো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি।
  • লেবু ও মধুর মিশ্রণে তৈরিকৃত পেস্ট ব্রণ শুকাতে বেশ কার্যকরী একটি উপাদান। লেবুতে থাকা অ্যাসিড ব্রণ শুকাতে এবং মধুতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান ত্বককে সংক্রমণ ও ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। এই মিশ্রণটি ছেলে মেয়ে উভয়েই ব্যবহার করে ব্রণের সমস্যা থেকে উপকার পেতে পারেন।
  • মধু, লেবু ও আদা দিয়ে তৈরিকৃত চা ঠান্ডা ও ইনফ্লুয়েঞ্জা উপশমে বেশ কার্যকরী একটি উপাদান। এক্ষেত্রে আদা শরীরের ইমিউন সিস্টেম ঠিক রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • মধুর সাথে লেবুর রস মিশিয়ে খেলে গলাব্যথা থেকেও আরাম পাওয়া যায়।

লেবু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা - মুখে লেবু ব্যবহারের নিয়ম

ঘরোয়া পদ্ধতিতে মুখের কালো দাগ দূর করে ফরসা হওয়ার অন্যতম উপায় হচ্ছে মুখে লেবু ব্যবহার। লেবু একটি প্রাকৃতিক উপাদান হওয়ায় এর উপকারিতাও আছে অনেক। আপনার যদি লেবু দিয়ে ত্বকের যত্নের উপায় গুলো জানা থাকে তাহলে আপনি এর নিয়মিত ব্যবহারে ভালো ফলাফল পেতে পারেন। জেনে রাখা ভালো যে, যাদের ত্বক সেনসিটিভ তারা লেবুর রস সরাসরি মুখে ব্যবহার করলে হতাশাজনক ফলাফল পেতে পারেন। 

তাই যাদের স্কিন সেনসিটিভ তারা লেবুর রস সারসরি মুখে না দিয়ে লেবুর রসের সাথে পানি বা মধু মিশিয়ে পাতলা করে নিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। তাহলে, চলুন মুখে লেবু ব্যবহারের উপকারিতা ও নিয়ম গুলো জেনে নেই

যারা মুখের দাগ নিয়ে চিন্তিত তারা লেবু ব্যবহারে উপাকার পেতে পারেন। লেবুতে থাকা সাইট্রিক অ্যাসিড ও ব্লিচিং প্রপার্টি মুখের দাগ দূর করতে বেশ কার্যকরী। মুখের দাগ দূর করার জন্য একটি টাটকা লেবু থেকে রস বের করে তুলায় ভিজিয়ে মুখের দাগের উপর দিন। যদি আপনার স্কিন সেনসিটিভ হয় তাহলে আপনি লেবুর রসের সাথে মধু বা পানি মিশিয়ে পাতলা করে ব্যবহার করতে পারেন। এরপর প্যাকটি ১০ থেকে ১৫ মিনিট রেখে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এভাবে নিয়মিত ১৫ দিন ব্যবহার করলে আপনি এর পার্থক্য দেখতে পারবেন।

এছাড়াও মুখে লেবু ব্যবহারের আরো অনেক গুলো উপায় বা নিয়ম রয়েছে। যেমন ফরসা হওয়ার জন্যে ঘরোয়া পদ্ধতিতে লেবুর লোশন তৈরি করে ব্যবহার করতে পারেন। লেবুর লোশন তৈরি করার জন্য দুই ভাগ লেবুর রসের সাথে তিন ভাগ গ্লিসারিন ও এক ভাগ হালকা রাম যোগ করুন। এরপর মিশ্রণটি ভালোভাবে মিশিয়ে ত্বকের উপর প্রয়োগ করুন । এভাবে নিয়মিত ব্যবহারে আপনি এর পার্থক্য উপলব্ধি করতে পারবেন।

আবার, ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে লেবুর রসের সাথে, টমেটোর রস, শসার রস এবং চন্দন বাটা ভালোভাবে মিশিয়ে ত্বকের উপর প্রয়োগ করুন এবং ১৫ থেকে ২০ মিনিট রেখে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে নিয়মিত ব্যবহার করুন তাহলে আপনি এর পার্থক্য দেখতে পারবেন। আশাকরি আজকের আর্টিকেলের এই অনুচ্ছেদের মধ্যে আপনারা মুখে লেবু ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।

লেবু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা - ত্বকে লেবুর ব্যবহার

লেবু ফলটি দেখতে ছোট হলেও এর রয়েছে অনেক গুণ। লেবুর অনেকগুলো গুণের মধ্যে একটি হচ্ছে লেবু ত্বকের জন্য বেশ উপকারী। তবে, শুধু উপাকারের কথা চিন্তা করেই এটা ত্বকে ব্যবহার করলে চলবে না জানতে হবে এর ব্যবহার বিধিও। তাহলে চলুন জেনে নেই ত্বকের যত্নে লেবুর ব্যবহার সম্পর্কে।

একটি লেবু থেকে অর্ধেক অংশ কেটে নিয়ে তার রস বের করে নিন। এবার বের করা লেবুর রসের সাথে ২ চামচ মধু মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করে নিন। এবার তৈরিকৃত মিশ্রণটি ত্বকের উপর লাগিয়ে ১০ থেকে মিনিট ১৫ মিনিট রেখে দিয়ে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। লেবুর এই মিশ্রণটি ত্বককে উজ্জ্বল ও করতে বেশ কার্যকরী। যাদের ত্বক তৈলাক্ত তারাও লেবু ব্যবহার করে উপকার পেতে পারেন। ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর করতে ঘরোয়া এই পদ্ধতিটি বেশ কার্যকরী। 

ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর করার জন্যে ডিমের সাদা অংশের সাথে লেবুর রস ও কমলা লেবুর রস কুসুম গরম পানির সাথে মিশিয়ে ত্বকের উপর লাগিয়ে দিন। তারপর এটি ত্বকের উপর ২০ থেকে ২৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন । এটি নিয়মিত ব্যবহারে ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর হবে সেইসাথে ত্বকের উজ্জ্বলতাও বৃদ্ধি পাবে। এ ছাড়াও ত্বক কোমল করতে চালের গুঁড়ার সাথে লেবুর রস মিশিয়ে হাতে পায়ে লাগিয়ে দিন। এভাবে নিয়মিত ব্যবহারে আপনার ত্বক কোমল ও মসৃন হয়ে উঠবে।

লেবু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা - চুলে লেবুর ব্যবহার

চুলের যত্নে সবাইতো বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি তেল ব্যবহার করেছেন। কিন্তু চুলের যত্নে কখনোও কি লেবু ব্যবহার করে দেখেছেন? দেখেননি তাই না! তাহলে চলুন আজকে আমরা চুলের যত্নে লেবুর ব্যবহার সম্পর্কে জেনে নেই।

লেবু একটি উপকারী ফল এটা আমরা সবাই জানি। লেবুতে থাকা ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, সাইট্রিক অ্যাসিড ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান চুলের গোড়া মজবুত করতে, চুল পড়া কমাতে, চুলের পুষ্টি জোগাতে ও চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে সহায়তা করে। লেবুর এই উপাদানগুলো চুলের যত্নে অনেক কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। তবে একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে যে লেবুর রস সরাসরি চুলের উপর প্রয়োগ করা যাবে না। এতে করে চুলের দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি হতে পারে। তাই চুলের যত্নে লেবুর কয়েকটি হেয়ার মাস্ক বিবরণ দেখে নিন।

১) চুল পড়া বন্ধ করতেঃ যারা অতিরিক্ত চুল পড়ার সমস্যায় ভুগছেন তারা এই পদ্ধতিটি ব্যবহার করে চুল পড়া কমাতে পারেন। চুল পড়া কমাতে লেবুর রস, ভিনেগার ও সামান্য লবণ মিশিয়ে একটা মিশ্রণ তৈরি করে সেটা চুলে লাগিয়ে দিন। এভাবে কিছুদিন নিয়মিত ব্যবহারে চুল পড়া একেবারে বন্ধ হয়ে যাবে।

২) চুলের বৃদ্ধি বাড়াতে ঃ চুলের বৃদ্ধি বাড়াতে নাড়কেল তেলের সাথে লেবুর রস মিশ্রিত করে চুল ও মাথার তালুতে ভালোভাবে ম্যাসাজ করে দিন। এরপর মিশ্রণটি এক ঘন্টা রেখে শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। এই মিশ্রণটি চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে সহায়তা করে।

৩) মাথার খুশকি দূর করতে ঃ অনেকে মাথার খুশকি দূর করা নিয়ে চিন্তিত। তাই যারা খুশকির সমস্যায় ভুগছেন তারা লেবু ব্যবহারে উপকার পেতে পারেন। খুশকি দূর করতে পানির সাথে লেবুর রস মিশিয়ে ভালোভাবে চুল ধুয়ে ফেলুন। এতে লেবুর মধ্যে থাকা অ্যাসিডিক উপাদান প্রাকৃতিক ভাবে খুশকি দূর করতে বেশ কার্যকরী।

লেবু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে শেষ কথা

প্রিয় পাঠক আজকের এই লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা পোস্টে আমরা আলোচনা করেছি লেবু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা, লেবু খাওয়ার সঠিক নিয়ম, লেবুর খোসার উপকারিতা ও অপকারিতা, খালি পেটে লেবু খাওয়ার উপকারিতা, গরম পানিতে লেবু খাওয়ার উপকারিতা, অতিরিক্ত লেবু খাওয়ার অপকারিতা, 

মধু ও লেবুর রসের উপকারিতা, মুখে লেবু ব্যবহারের নিয়ম, ত্বকে লেবুর ব্যবহার, চুলে লেবুর ব্যবহার এই সব বিষয়গুলো নিয়ে। আজকের আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনার ভালো লেগে থাকে এবং আপনার কোনো উপকার হয়ে থাকে তাহলে এটি আপনার পরিচিতদের সাথে শেয়ার করে দিবেন। ধন্যবাদ সবাইকে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
1 জন কমেন্ট করেছেন ইতোমধ্যে
  • নামহীন
    নামহীন ২ অক্টোবর, ২০২৩ এ ৩:০৬ AM

    আমি আপনাদের এই পোস্টটি দেখে লেবুর সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারলাম, আসলেই লেবু অনেক উপকারিতা, ধন্যবাদ ২৫ টি গুনাগুন বলার জন্য

মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ফিউচার ড্রীম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url