ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য কি ল্যাপটপ লাগবেই? জানুন মোবাইল দিয়েও শুরু করার উপায়

ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে কি ল্যাপটপ অবশ্যই প্রয়োজন? মোবাইল দিয়েই কীভাবে কাজ শুরু করবেন জেনে নিন

অনেকেই মনে করেন ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে হলে অবশ্যই একটা ল্যাপটপ বা কম্পিউটার দরকার। কিন্তু সত্যি বলতে কী, এটা পুরোপুরি সত্য নয়। এখনকার স্মার্টফোনগুলো এতটাই শক্তিশালী যে আপনি চাইলে অনেক ফ্রিল্যান্সিং কাজ মোবাইল দিয়েই শুরু করতে পারেন। শুধু দরকার সঠিক দিকনির্দেশনা আর কিছু প্রয়োজনীয় স্কিল।

মোবাইল দিয়েও ফ্রিল্যান্সিং সম্ভব, তবে...

বর্তমানে অনেকেই মোবাইল ফোন দিয়েই ফাইভার, আপওয়ার্কের মতো জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেসে কাজ করছেন এবং ভালো আয় করছেন। তবে প্রশ্ন হলো, সব ধরনের কাজ কি মোবাইল দিয়ে করা যায়? উত্তর হলো – না, সব কাজ নয়।

যেমন ধরুন, আপনি যদি প্রফেশনাল গ্রাফিক ডিজাইনের মতো ভারি কাজ করতে চান, তাহলে অবশ্যই ল্যাপটপ বা কম্পিউটার দরকার হবে। কারণ Photoshop, Illustrator-এর মতো সফটওয়্যারগুলো মোবাইলে সঠিকভাবে ব্যবহার করা সম্ভব নয়। কিন্তু যদি আপনি কন্টেন্ট রাইটিং, সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট বা ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্টের মতো হালকা কাজ করতে চান, তাহলে মোবাইল দিয়েই শুরু করা যাবে।

মোবাইল দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করার সহজ উপায়

বর্তমান প্রযুক্তি এ পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে, যেখানে মোবাইল এর মাধ্যমে অনেক ধরনের কাজ করা যায়। Google Docs, spreadsheet, Canva, Kinemaster, Microsoft Office ইত্যাদি অ্যাপ ব্যবহার এর মাধ্যমে কাজ করা সম্ভব। প্রথমেই আপনাকে কিছু সুনির্দিষ্ট স্কিল শিখে নিতে হবে এবং ধীরে ধীরে অভিজ্ঞতা বাড়াতে হবে।

মোবাইল দিয়ে একাউন্ট খোলা, প্রোফাইল তৈরি, ক্লায়েন্টের সাথে চ্যাট করা, ছোট কাজ সাবমিট দেওয়া – এসব খুব সহজেই করা যায়। এক্ষেত্রে প্রতিদিন নিয়মিত অনুশীলন খুবই জরুরি।

মার্কেটপ্লেসে মোবাইল দিয়ে কাজ করার উপায়

ফাইভার, আপওয়ার্ক, ফ্রিল্যান্সার ডটকমের মতো মার্কেটপ্লেসে মোবাইল দিয়েই একাউন্ট খোলা, গিগ তৈরি, ক্লায়েন্টের সাথে যোগাযোগ করা এবং ছোটখাটো কাজ করা সম্ভব। তবে এ জন্য এমন কিছু স্কিল বেছে নিতে হবে যেগুলো মোবাইলেই করা যায়। যেমন:

  • ডেটা এন্ট্রি

  • কন্টেন্ট রাইটিং

  • কাস্টমার সাপোর্ট

  • সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডলিং

এছাড়া সময়মতো ক্লায়েন্টকে রিপ্লাই দেওয়া, ফিডব্যাক নেওয়া বা ইনভয়েস পাঠানোর কাজগুলোও মোবাইলে করা সম্ভব।

মার্কেটপ্লেসের বাইরেও মোবাইলে কাজ করা সম্ভব

মার্কেটপ্লেসের বাইরেও ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার (এক্স), ইনস্টাগ্রামের মাধ্যমে ক্লায়েন্ট খোঁজা সম্ভব। হোয়াটসঅ্যাপ, Zoom, Telegram-এর মাধ্যমে ক্লায়েন্টদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলা যায়। এমনকি মোবাইল দিয়েই ডকুমেন্ট শেয়ার, বিলিং, ইনভয়েস তৈরি করাও সম্ভব।

মোবাইল দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করার সুবিধা ও অসুবিধা

সুবিধা:

  • মোবাইল ছোট, সহজে বহনযোগ্য

  • যেকোনো জায়গা থেকে কাজ করা যায়

  • কিছু নির্দিষ্ট অ্যাপ দিয়ে অনেক কাজ সম্ভব

অসুবিধা:

  • ভারী সফটওয়্যার মোবাইলে চলে না

  • বড় স্ক্রিনের অভাবে কাজের গতি কমে যায়

  • মোবাইল দ্রুত হ্যাং করতে পারে

  • একাধিক ট্যাব বা সফটওয়্যার একসাথে চালানো যায় না

তাই মোবাইল দিয়ে শুরু করা গেলেও, এক পর্যায়ে একটি ভালো ল্যাপটপ বা কম্পিউটারের প্রয়োজন হবেই।

ফ্রিল্যান্সিংয়ের জন্য কোন ধরনের ল্যাপটপ দরকার?

আপনার কাজের ধরন অনুযায়ী ল্যাপটপের কনফিগারেশন নির্ভর করবে।

হালকা কাজের জন্য (ডেটা এন্ট্রি, ডিজিটাল মার্কেটিং ইত্যাদি):

  • Processor: Intel Core i3 10th Gen বা AMD Ryzen 3

  • RAM: কমপক্ষে ৮ জিবি

  • SSD: ২৫৬ জিবি NVMe

ভারি কাজের জন্য (গ্রাফিক ডিজাইন, ভিডিও এডিটিং, কোডিং):

  • প্রসেসর: Intel Core i5/i7 বা AMD Ryzen 5/7

  • RAM: ১৬ জিবি বা তার বেশি

  • SSD: ৫১২ জিবি বা বেশি

একটি ভালো ডিসপ্লে (১৪"-১৫.৬") এবং ৮ ঘণ্টার ব্যাটারি ব্যাকআপ থাকলে আরও ভালো।

ল্যাপটপ না কম্পিউটার – কোনটি বেছে নেবেন?

আপনি যদি ঘুরে ঘুরে কাজ করতে চান, বা বিভিন্ন জায়গা থেকে কাজ করার ইচ্ছা থাকে, তাহলে ল্যাপটপ হবে সেরা।

আবার যদি ঘরে বসে দীর্ঘসময় ধরে ভারি কাজ করেন, তাহলে ডেস্কটপ কম্পিউটার হবে বেস্ট অপশন।

ডেস্কটপ কম্পিউটারে পারফরম্যান্স বেশি, কাস্টমাইজ করা যায় এবং দীর্ঘসময় কাজ করতেও আরামদায়ক।

ফ্রিল্যান্সিংয়ের জন্য কোন স্কিল শিখবেন?

এটা নির্ভর করে আপনি কী করতে পছন্দ করেন।

  • যদি লিখতে পছন্দ করেন → কন্টেন্ট রাইটিং, কপিরাইটিং

  • যদি ডিজাইন করতে ভালো লাগে → গ্রাফিক ডিজাইন, ভিডিও এডিটিং

  • কোডিং ভালো লাগে → ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট

  • কম ঘাম ঝরিয়ে আয় করতে চান → ডিজিটাল মার্কেটিং, সিপিএ মার্কেটিং

কখনও কারো দেখানো পথে না হেঁটে নিজের আগ্রহ অনুযায়ী স্কিল বেছে নিন, তাহলেই সফলতা আসবে।

শেষ কথা: তাহলে কি ল্যাপটপ ছাড়া ফ্রিল্যান্সিং সম্ভব?

সংক্ষেপে বললে, হালকা কাজের জন্য মোবাইল যথেষ্ট, কিন্তু ভারী কাজের জন্য ল্যাপটপ বা কম্পিউটার অপরিহার্য। তাই মোবাইল দিয়ে শুরু করুন, অভিজ্ঞতা অর্জন করুন এবং সময়মতো একটি ভালো ডিভাইসে আপগ্রেড করুন।

এই তথ্যগুলো আপনার উপকারে আসলে অবশ্যই বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করুন।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ফিউচার ড্রীম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url